বাংলাদেশ

হঠাৎ করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু, রক্ত দিয়ে ভিজে যায় রাস্তা!

হঠাৎ করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু, রক্ত দিয়ে ভিজে যায় রাস্তা! জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমানের ছেলে মোহাম্মদ বাবুকে (৩৬) উন্নত চিকিৎসার জন্য নেওয়া হচ্ছে থাইল্যান্ডে।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটে তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে। দেশটির বেজথানি হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে তাকে। গণ-অভ্যুত্থানে আহত আরও ৪ জন এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বাবুর সঙ্গে থাইল্যান্ড যাচ্ছেন তার বোন সুবর্ণা। তিনি জানান, আমার ভাইয়ের চিকিৎসায় সরকার খুব আন্তরিক। আমরা চিন্তাও করতে পারিনি বাবুকে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড নেওয়া হবে। তিনি স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান।

জানা গেছে, মোহাম্মদ বাবু কাজ করতেন নয়াপল্টনের ছাপাখানায়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বন্ধ হয়ে যায় সেই ছাপাখানা। কিন্তু বাসায় বসে থাকেননি তিনি। জড়িয়ে পড়েন স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে। শনির আখড়ায় বাসা হওয়ায় এ এলাকায় প্রতিদিন আন্দোলন করতেন। ২০ জুলাই সকালের দিকে আন্দোলনে যোগদান করেন। গলি থেকে মিছিল নিয়ে মেইন রাস্তায় চলে যান

এ সময় হঠাৎ হেলিকপ্টার থেকে গুলি শুরু হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবু ৫-৬ হাত দূরে ছিটকে পড়েন। পুলিশ তাকে ঘিরে ধরে রাখে। পরিচিত একজন তার বোনকে ফোন দিয়ে আসতে বলে। বোন বাবুর ৪ বন্ধুসহ ভাইকে উদ্ধার করতে আসেন। কিন্তু পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়। রাস্তায় পড়ে থাকে বাবু।

৫-৬ ঘণ্টা পর বোনের জামাই এসে তাকে মুগদা মেডিকেল কলেজে নিয়ে যায়। কেন হাসিনার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে? এ অভিযোগে চিকিৎসা শুরু করতেও দেরি হয়। এদিকে রক্তশূন্য হয়ে বাবু মৃতপ্রায়।

মুক্তিযোদ্ধা বাবা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িতদের পায়ে পড়েন। শুরু হয় চিকিৎসা। কিন্তু মেয়ে তো হাজতে বন্দি। তাকে ছোটাতে যান মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান। পুলিশ তাকে অপমান করে তাড়িয়ে দেয়। পরে রাতে পুলিশ ফোন করে স্বামীকে ৪ হাজার টাকা নিয়ে যেতে বলে। গরিব মানুষ ধারদেনা করে ৪ হাজার টাকা দিলে মুক্তি মেলে বাবুর বোনের। কিন্তু মুক্তি মেলে না বন্ধুদের। তাদের পাঠানো হয় কারাগারে।

বাবুর পেটের নিচের অংশ দিয়ে গুলি ঢুকে কোমরের পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। গুলি ছিন্নভিন্ন করে বাবুর খাদ্যনালী, মুত্রথলি, কোমরের হাড়।

মুগদা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা তার পেটে দুবার অপারেশন করেন। তার খাদ্যনালীর অনেকাংশ কেটে ফেলতে হয়। বাকি অংশ পেটে ছিদ্র করে আলাদা করে মলত্যাগের রাস্তা বানানো হয়।

কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না। পরে সেপ্টেম্বর মাসে তাকে বিএমএমইউ-তে স্থানান্তরিত করা হয়। চিকিৎসায় কিছু উন্নতি হলেও একদিন খাদ্যনালী নতুন করে বানানো মলত্যাগের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে আসে। ফলে অবস্থা খারাপ হয় বাবুর। মেডিকেল বোর্ড তাকে সিদ্ধান্ত নেয় দেশের বাইরে পাঠানোর। ১৫ দিন আগে থাইল্যান্ডের চিকিৎসক এসে বাবুর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। পরে তারা তাকে থাইল্যান্ডে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button